হযরত সোলায়মান (আঃ) ও পিপীলিকার
ঘটনা
হযরত সোলায়মান (আঃ) এর সেনাবাহিনী
জ্বিন ও মানবকুল সমন্বয়ে গঠিত ছিল। অন্যান্য জীবকুলও তাঁর
সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভূক্ত ছিল। এত বিশাল
বাহিনী থাকা সত্ত্বেও কোন প্রকার বিশৃংখলা/অনিয়ম হত
না, বিশৃংখলা
পরিস্থিতি সৃষ্টির সাহসও কেউ করতে পরতো না। নিয়ম অনুযায়ী সবারই স্থান নির্ধারিত ছিল। নির্ধারিত
স্থানে সারিবদ্ধ হওয়া ব্যতিরেকে কোন বাহিনীই অগ্রসর হতে সাহস পেত না। অটুট
শৃংখলা সম্পন্ন এ বিশাল বাহিনী নিয়ে পথ চলতেন।
হযরত সুলায়মান (আঃ) একদা তাঁর বিশাল সেনাবাহিনী সহ একটি
এলাকা অতিক্রম করছিলেন। ঐ সময় তাঁর সাথে জিন, মানুষ
পক্ষীকুল ছিল। যে এলাকা দিয়ে তাঁরা যাচ্ছিলেন সে এলাকায়
বালির ঢিবি সদৃশ পিপীলিকাদের বহু বসতঘর ছিল। সুলায়মান
বাহিনীকে আসতে দেখে পিপীলিকাদের সর্দার তাদেরকে বলল, তোমরা শীঘ্র পালাও। নইলে
পাদপিষ্ট হয়ে শেষ হয়ে যাবে। সুলায়মান (আঃ) পিপীলিকাদের এই
বক্তব্য শুনতে পেলেন। এ বিষয়ে কুরআনী বর্ণনা নিম্নরূপ:
وَوَرِثَ سُلَيْمَانُ دَاوُودَ وَقَالَ يَا أَيُّهَا النَّاسُ عُلِّمْنَا مَنطِقَ الطَّيْرِ وَأُوتِينَا مِن كُلِّ شَيْءٍ إِنَّ هَذَا لَهُوَ الْفَضْلُ الْمُبِينُ- وَحُشِرَ لِسُلَيْمَانَ جُنُودُهُ مِنَ الْجِنِّ وَالْإِنسِ وَالطَّيْرِ فَهُمْ يُوزَعُونَ- حَتَّى إِذَا أَتَوْا عَلَى وَادِي النَّمْلِ قَالَتْ نَمْلَةٌ يَا أَيُّهَا النَّمْلُ ادْخُلُوا مَسَاكِنَكُمْ لاَ يَحْطِمَنَّكُمْ سُلَيْمَانُ وَجُنُودُهُ وَهُمْ لاَ يَشْعُرُونَ- فَتَبَسَّمَ ضَاحِكاً مِّن قَوْلِهَا وَقَالَ رَبِّ أَوْزِعْنِي أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِي أَنْعَمْتَ عَلَيَّ وَعَلَى وَالِدَيَّ وَأَنْ أَعْمَلَ صَالِحاً تَرْضَاهُ وَأَدْخِلْنِي بِرَحْمَتِكَ فِي عِبَادِكَ الصَّالِحِينَ- (نمل ১৬-১৯)-
‘সুলায়মান
দাঊদের স্থলাভিষিক্ত হ’ল এবং
বলল, হে
লোক সকল! আমাদেরকে পক্ষীকুলের ভাষা শিক্ষা দেওয়া হয়েছে এবং আমাদেরকে সবকিছু দেওয়া
হয়েছে। নিশ্চয়ই এটি একটি সুস্পষ্ট শ্রেষ্ঠত্ব’ (নমল ১৬)। ‘অতঃপর
সুলায়মানের সম্মুখে তার সোনাবাহিনীকে সমবেত করা হ’ল জিন, মানুষ ও পক্ষীকুলকে। তারপর তাদেরকে
বিভিন্ন ব্যুহে বিভক্ত করা হ’ল’
(১৭)। ‘অতঃপর
যখন তারা একটি পিপীলিকা অধ্যুষিত এলাকায় উপনীত হ’ল, তখন এক পিপীলিকা বলল, ‘হে পিপীলিকা দল! তোমরা তোমাদের গৃহে প্রবেশ
কর। অন্যথায় সুলায়মান ও তার বাহিনী অজ্ঞাতসারে তোমদেরকে পিষ্ট
করে ফেলবে’ (১৮)। ‘তার কথা শুনে
সুলায়মান মুচকি হাসল এবং বলল, ‘হে আমার পালনকর্তা! তুমি আমাকে ক্ষমতা দাও, যেন আমি তোমার
নে‘মতের
শুকরিয়া আদায় করতে পারি,
যা তুমি আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে দান করেছ এবং যাতে আমি তোমার পসন্দনীয়
সৎকর্মাদি করতে পারি এবং তুমি আমাকে নিজ অনুগ্রহে তোমার সৎকর্মশীল বান্দাদের
অন্তর্ভুক্ত কর’ (নমল ২৭/১৬-১৯)।
উপরোক্ত আয়াতগুলিতে প্রমাণিত হয় যে, সুলায়মান (আঃ)
কেবল পাখির ভাষা নয়, বরং
সকল জীবজন্তু এমনকি ক্ষুদ্র পিঁপড়ার কথাও বুঝতেন। এজন্য
তিনি মোটেই গর্ববোধ না করে বরং আল্লাহর অনুগ্রহের প্রতি শুকরিয়া আদায় করেন এবং
নিজেকে যাতে আল্লাহ অন্যান্য সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত করেন সে প্রার্থনা করেন। এখানে
আরেকটি বিষয় প্রমাণিত হয় যে, তিনি কেবল জিন-ইনসানের নয় বরং তাঁর সময়কার সকল জীবজন্তুরও
নবী ছিলেন। তাঁর নবুঅতকে সবাই স্বীকার করত এবং সকলে তাঁর
প্রতি আনুগত্য পোষণ করত। যদিও জিন ও ইনসান ব্যতীত অন্য
প্রাণী শরী‘আত
পালনের হকদার নয়