তাদের সম্পর্কে জনমনে কতো কী ধারণা! তাদের আকীদা বিশ্বাস নিয়ে কতো অবাস্তব কল্পনা। সবচেয়ে ভয়ংকর যে ধারনা প্রচলিত, তা হলো, তারা সাধারন মুসলমানকে কাফের মনে করে, তাদের জানমালকে হালাল মনে করে। তারা মানুষকে তরবারির জোরে তাদের দাওলার অধীনে যেতে বাধ্য করে। নিচে তাদের কিছু আকীদা ও রাষ্ট্রীয় মূলনীতি তুলে ধরা হলো। আরও হাস্যকর ব্যাপার হলো, তারা নাকি ওলামায়ে দেওবন্দকে পেলে জবাই করবে। অথচ বাংলাদেশ-পাকিস্তান-আফগানিস্তানের অসংখ্য হানাফী-দেওবন্দী তাদের সাথে ময়দানেই আছে। দেখা যাক তাদের বিশ্বাস-আকীদাসমূহ কী?
----
এক: তারা বিশ্বাস করে:
= যত প্রকারের শিরক আছে, শিরকের প্রকাশস্থল আছে, শিরকের মাধ্যম আছে, সেগুলো ধ্বংস করে দেয়া ওয়াজিব।
.
দুই: তারা বিশ্বাস করে:
= শী‘আ মতবাদ একটি মুশরিক ও মুরতাদ দল। তারা ইসলামের বাহ্যিক অনেক বিধান বাস্তবায়নের প্রতিবন্ধক
.
তিন: তারা বিশ্বাস করে:
= জাদুকররা মুরতাদ-কাফির। তাদেরকে হত্যা করা ওয়াজিব। তাদেরকে পাকড়াও করার পর, দুনিয়াতে তাদের তাওবা গ্রহণযোগ্য নয়।
.
চার: তারা বিশ্বাস করে:
= যিনা, মদপান, চুরি ইত্যাদি পাপের কারণে কোনও মুসলমানকে কাফের মনে করে না। যদি তারা কা‘বামুখী হয়ে নামায পড়ে। তবে যদি তারা উক্ত পাপসমূহকে হালাল মনে করে, সেটা ভিন্ন মাসয়ালা। ঈমানের ক্ষেত্রে তাদের বক্তব্য হলো:
আমরা সীমালঙ্ঘনকারী খারেজী, অতি শিথিল মুরজিয়াদের আকীদার মধ্যবর্তী অবস্থানে আছি।
.
পাঁচ: যারা দুই শাহাদাহ উচ্চারণ করে ইসলামকে প্রকাশ করে, ইসলাম ভঙ্গকারী কোন কিছুকে ঈমানের সাথে মেশায় না, তাদের সাথে একজন মুসলমানের মতোই আচরণ করা হয়। তার ভেতরের বিষয়টা আল্লাহর হাওয়ালা করে দেয়।
.
ছয়: কুফুর দুই প্রকার:
ক: ছোট কুফর।
খ: বড় কুফর।
ব্যক্তির কথা-কাজ-বিশ্বাস অনুযায়ী তার ওপর হুকুম বর্তাবে। তবে নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তিকে তাকফীর করা, তাকে চিরস্থায়ী জাহান্নামী বলাটা নির্ভর করবে তাকফীরের শর্ত পাওয়া যাওয়ার ওপর।
.
সাত: ইসলামী রাষ্ট্রে, আল্লাহর শরীয়াহর কাছে বিচার উত্থাপন করাকে ওয়াজিব মনে করে। শরীয়া আদালত সম্পর্কে জানা না থাকলে, সেটার অনুসন্ধান করাকেও ওয়াজিব মনে করে তারা।
.
আট: তাগুতের কাছে, মানবরচিত কানূন ও গোত্রীয় বিধানের কাছে বিচারপ্রার্থী হওয়াকে তারা ইসলাম ভঙ্গকারী বিষয় মনে করে। কারণ? আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
-আর যারা আল্লাহর নাযিল করা বিধান অনুযায়ী শাসন করবে না, তারাই কাফির।
.
ছয়: নবিজী (সা.)-এর প্রতি সম্মান প্রদর্শনকে ওয়াজিব মনে করে। কোনও ক্ষেত্রে নবিজী (সা.)-এর চেয়ে এগিয়ে যাওয়াকে হারাম মনে করে। যারা তার সম্মানহানি করবে, তাদেরকে মুরতাদ-কাফির মনে করে।
পবিত্র আহলে বাইত, সাহাবায়ে কেরাম, চার খলীফায়ে রাশেদ-এরও যারা সম্মানহানি করবে, তাদেরকেও মুরতাদ-কাফির মনে করে।
.
সাত: ধর্মনিরপেক্ষতার যত প্রকারভেদ আছে, জাতীয়তাবাদ, সাম্যবাদ ইত্যাদি সুস্পষ্ট কুফুরি। এসব ইসলাম ভঙ্গকারী বিষয়। যে রাজনীতি আল্লাহর শরীয়তকে বদলে দেয়, বিধর্মী-খ্রিস্টান-শী‘আ-মুরতাদদেরকে আল্লাহর মুমিন বান্দাদের ওপর চাপিয়ে দেয় দেয়, সেটাতে অংশগ্রহণকেও তারা কুফুরি মনে করে।
.
আট: দখলদার কাফির বাহিনীকে কোনও রকমের সাহায্য-সহযোগিতা করাকেও তারা কুফুরি ও ইরতিদাদ মনে করে। যারা এমন করবে, তাদের রক্ত হালাল মনে করা হবে।
.
নয়: আন্দালুস হাতছাড়া হওয়ার পর থেকেই, উম্মাহর ওপর জিহাদ (তা‘য়ীনি-সুনির্দিষ্টভাবে) ফরয হয়ে আছে। হাতছাড়া হওয়া মুসলিম ভূমি উদ্ধার করা পর্যন্ত এ-তা‘য়িনী সময়টা বহাল থাকবে। এ-সময় আল্লাহর সাথে কুফুরি করার পর সবচেয়ে বড় গুনাহ হলো, জিহাদ থেকে নিষেধ করা।
.
দশ: কোনও দেশে যদি কাফিরদের তৈরী করা বিধানের প্রাবল্য থাকে, এবং সেখানে ইসলামকে পাশ কাটিয়ে, কুফুরের বিধি-বিধানের প্রতিষ্ঠা থাকে, সে দেশ কুফুরি রাষ্ট্র বলে গন্য হবে।
.
তবে তার মানে এ নয়, সে দেশের অধিবাসীরা কাফির। তাগুতের বিধান বাস্তবায়নকারী সরকার ও সংশ্লিষ্ট বাহিনী কুফুরি-ইরতিদাদে জড়িত। এদের সাথে লড়াই করা, ক্রুশেডারদের বিরুদ্ধে লড়াই করার চেয়েও বেশি আবশ্যক।
.
এগার:তাগুত রাষ্ট্রের রক্ষাকারী সব বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করাকে অবশ্যক মনে করে তারা।
.
বার: ইসলামী রাষ্ট্রে বর্তমানে যেসব আহলে কিতাব ও স্যাবিয়ানরা আছে, তারা সবাই ‘আহলে হারব’। যুদ্ধের আওতায়। তাদের জন্যে কোনও যিম্মা নেই। কারন তার অতীতে যেসব চুক্তি করেছিল, তার সব ভঙ্গ করেছে।
তারা যদি আমন-নিরাপত্তা নিয়ে থাকতে চায়, তাদেরকে চুক্তি আবার নবায়ন করতে হবে। উমার (রা.)-এর সাথে যে চুক্তি করেছিল সেটার নবায়ন।
.
তের: ময়দানে জিহাদরত বিভিন্ন দলের ভাইরা তাদের দ্বীনি ভাই। তাদেরকে কাফির-ফাজির বলে আখায়িত করে না।
তবে এদের কেউ যদি এক পতাকাতলে শামিল হওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকে, তাদেরকে অবাধ্য (উসাত) বলে।
.
চৌদ্দ: কোনও দল বা ব্যক্তি যদি, দখলদার খ্রিস্টবাহিনীর সাথে, চুক্তি করে, সমঝোতা করে, ঐক্যমত্যে পৌছে, তাদের দৃষ্টিতে সেটা বাতিল। অকেজো। প্রত্যাখ্যাত।
.
পনের: সত্যিকার আমলদার ওলামায়ে কেরামকে তারা সম্মান করা, তাদেরকে রক্ষা করাকে আবশ্যক মনে করে তারা। তবে যারা তাগুতের পদলেহন করে, দ্বীনের ক্ষেত্রে শিথিলতা করে, তাদের ব্যাপার আলাদা।
.
ষোল: জিহাদের ক্ষেত্রে যারা তাদের অগ্রগামি, তারা তাদের প্রাপ্য মর্যাদার কথা স্বীকার করে। আদায় করে। তাদের পরিবার, ধনসম্পদের প্রতি যথাযথ সদাচার করে।
.
সতের: মুসলিম বন্দী ও তাদের ঘরবাড়িকে কাফিরদের হাত থেকে মুক্ত করাকে ওয়াজিব মনে করে। যুদ্ধের মাধ্যমে বা মুক্তিপনের মাধ্যমে।
বন্দী ও শহীদদের পরিবারের ভরনপোষণের দায়িত্ব নেয়াকেও তারা ওয়াজিব মনে করে।
.
আঠার: তারা বিশ্বাস করে, দুনিয়ার প্রাপ্তি কিছুটা কমে গেলেও, দ্বীনি বিষয়াদি শিক্ষা করা উম্মাহর ওপর আবশ্যক। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় দুনিয়াবি শিক্ষা অর্জন করাকেও আবশ্যক মনে করে। এর বাইরে শরীয়তের সীমায় থেকে অন্য জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা করা মুবাহ।
.
উনিশ: স্যাটেলাইট ও এ-ধরনের অন্য যেসব মাধ্যম অশ্লীলতা ছড়ায়, সেসবকে হারাম মনে করে।
নারীদের চেহারা ঢেকে রাখাকে আবশ্যক মনে করে। সব ধরনের খোলামেলাভাব, মেলামেশা থেকে দূরে থাকাকে আবশ্যক মনে করে। চারিত্রিক নিষ্কলুষতা ও পবিত্রতা বজায় রাখাকে ওয়াজিব মনে করে।
----
প্রতিটি আকীদার পক্ষে দলীল আছে। লম্বা হয়ে যাওয়ার ভয়ে উল্লেখ করা হলো না। যারা আগ্রহী সরাসরি শুনে নিতে পারেন। একদম মূল ব্যক্তির কণ্ঠে! হাফিযাহুল্লাহ। ওয়া ইয়্যানা।